আমাদের স্কুলের শিক্ষা ব্যবস্থা: অতীত ও বর্তমান

প্রফেসর রফিকুল ইসলাম ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৩ ৫ মিনিট পড়া
শিক্ষা ইতিহাস

উপকূলীয় আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় এর শিক্ষা ব্যবস্থার বিবর্তন নিয়ে এই লেখা। কিভাবে সময়ের সাথে সাথে আমাদের পাঠদান পদ্ধতি, পাঠ্যক্রম এবং শিক্ষার মান উন্নত হয়েছে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা।

প্রারম্ভিক দিনগুলো (১৯৯০-২০০০)

১৯৯০ এর দশকে আমাদের স্কুলের শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। সে সময়ে শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি, কিন্তু শিক্ষক সংখ্যা ছিল সীমিত। পাঠদান পদ্ধতি ছিল মূলত প্রচলিত লেকচার ভিত্তিক। বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব ছিল, কিন্তু শিক্ষকদের আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা সেই সীমাবদ্ধতা অনেকাংশে পুষিয়ে দিত।

পুরনো স্কুল ভবন
পুরনো শ্রেণীকক্ষ
১৯৯৫ সালে স্কুলের পুরনো ভবন এবং একটি শ্রেণীকক্ষ

সে সময়ে মূল্যায়ন পদ্ধতিও ছিল ভিন্ন। বার্ষিক পরীক্ষাই ছিল মূল্যায়নের প্রধান মাধ্যম। ক্রমাগত মূল্যায়ন বা সিসিএ পদ্ধতি তখন চালু হয়নি। তবে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও বন্ধুত্বপূর্ণ।

মিলেনিয়ামের পরিবর্তন (২০০০-২০১০)

নতুন সহস্রাব্দের শুরুতে আমাদের স্কুলে এসেছে নানা ধরনের পরিবর্তন। সরকারি উদ্যোগে এবং কিছু প্রাক্তন শিক্ষার্থীর সহায়তায় স্কুলে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়। বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আসতে শুরু করে।

"শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য শুধু পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করা নয়, বরং একজন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠা।"

প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালেক

এই সময়কালে পাঠ্যক্রমেও আসে বেশ কিছু পরিবর্তন। ইংরেজি ও গণিত শিক্ষার উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়। সহশিক্ষা কার্যক্রম যেমন বিতর্ক, আবৃত্তি, খেলাধুলার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ানোর জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়।

বর্তমান অবস্থা (২০১০-বর্তমান)

গত এক দশকে আমাদের স্কুলের শিক্ষা ব্যবস্থায় এসেছে আমূল পরিবর্তন। ডিজিটাল বাংলাদেশের অংশ হিসেবে স্কুলে চালু হয়েছে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম। পাঠদান পদ্ধতি হয়েছে আরও ইন্টারেক্টিভ ও অংশগ্রহণমূলক।

  • ডিজিটাল ক্লাসরুম ও স্মার্ট বোর্ড
  • বিজ্ঞান গবেষণাগারের আধুনিকায়ন
  • দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রম
  • ক্রমাগত মূল্যায়ন পদ্ধতি
  • ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং সেল
বিষয় ১৯৯০-২০০০ বর্তমান
শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রতি শ্রেণীতে ৭০-৮০ জন প্রতি শ্রেণীতে ৪০-৫০ জন
শিক্ষক সংখ্যা ১৫ জন ৩২ জন
পাঠ্যক্রম মূল বিষয়কেন্দ্রিক বিষয়ভিত্তিক + দক্ষতা উন্নয়ন
প্রযুক্তি ব্যবহার সীমিত ডিজিটাল ক্লাসরুম, কম্পিউটার ল্যাব
মূল্যায়ন পদ্ধতি বার্ষিক পরীক্ষা ক্রমাগত মূল্যায়ন + বার্ষিক পরীক্ষা

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

আমাদের স্কুলের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও আধুনিক ও যুগোপযোগী করতে কিছু পরিকল্পনা রয়েছে:

  1. স্কুলে একটি আধুনিক লাইব্রেরি ও গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন
  2. রোবোটিক্স ও কোডিং ক্লাব চালু করা
  3. শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি ও উপবৃত্তির পরিধি বৃদ্ধি
  4. শিক্ষকদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা
  5. পরিবেশ শিক্ষাকে পাঠ্যক্রমের সাথে আরও সমন্বয় করা

উপসংহার

উপকূলীয় আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থার এই বিবর্তন আমাদের গর্ব করার মতো। তবে এখনও অনেক দূর যেতে হবে। প্রযুক্তির এই যুগে শিক্ষার মান আরও উন্নত করতে হবে, যাতে আমাদের শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিযোগিতা করতে পারে। এই অগ্রযাত্রায় প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ভূমিকা অপরিসীম। আপনারাও এই উন্নয়ন প্রক্রিয়ার অংশ হতে পারেন।

প্রফেসর রফিকুল ইসলাম

প্রফেসর রফিকুল ইসলাম

প্রফেসর রফিকুল ইসলাম উপকূলীয় আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক (১৯৯৮-২০১০)। বর্তমানে তিনি শিক্ষা গবেষক হিসেবে কাজ করছেন এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরামর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন নিয়ে ৫টি বই লিখেছেন।

মন্তব্য (১২টি)

আপনার মন্তব্য লিখুন

মন্তব্যকারী
আব্দুল্লাহ আল মামুন
২ দিন আগে

অসাধারণ লেখা! ১৯৯৫ সালে আমি যখন এই স্কুল থেকে পাস করি, তখনকার অবস্থা আর এখনকার অবস্থার পার্থক্য সত্যিই অবাক করার মতো। বিশেষ করে বিজ্ঞান গবেষণাগারের উন্নতি দেখে আমি অভিভূত।

উত্তর দিন
মন্তব্যকারী
প্রফেসর রফিকুল ইসলাম
১ দিন আগে

ধন্যবাদ মামুন। তুমি যে সময়ে পড়েছ, সে সময়ে আমাদের সীমাবদ্ধতা থাকলেও শিক্ষকদের আন্তরিকতা ছিল অসীম। তোমার মত মেধাবী শিক্ষার্থীরা আমাদের সবসময় অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।

উত্তর দিন
মন্তব্যকারী
ফারহানা ইয়াসমিন
৩ দিন আগে

লেখাটি পড়ে আমার পুরনো দিনের স্মৃতি মনে পড়ে গেল। ২০০৫ সালে আমি যখন এই স্কুলে পড়তাম, তখনও ডিজিটাল ক্লাসরুম চালু হয়নি। বর্তমান শিক্ষার্থীরা সত্যিই ভাগ্যবান।

উত্তর দিন
মন্তব্যকারী
আরিফুল হক
১ সপ্তাহ আগে

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাগুলো খুবই আশাব্যঞ্জক। বিশেষ করে রোবোটিক্স ও কোডিং ক্লাবের কথা শুনে আমি খুবই উৎসাহিত। কিভাবে আমরা প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা এই উদ্যোগগুলোতে সহায়তা করতে পারি?

উত্তর দিন